সংবিধান সংস্কার যেভাবে হচ্ছে

রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে। দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান এক ব্যক্তি হবেন না। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে গঠনমূলক পরিবর্তন আনা হবে।
এমনসব বিধানের আলোকে সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ করতে যাচ্ছে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন। গতকাল বন্ধের দিনেও সংস্কার কমিশনের বৈঠক হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান, সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার জন্য তারা এখন শেষ পর্যালোচনায় রয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদ টানা হবে, না মাঝে এক মেয়াদ বিরতি দিয়ে হবে। সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। রাষ্ট্রপতির প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে। গঠনের সময়ে কমিশনের মেয়াদ ৯০ দিন করা হয়। সেটা আগামী ৭ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে বৃহস্পতিবার সরকার এক প্রজ্ঞাপনে কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।
কমিশন তার সুপারিশ তৈরির লক্ষ্যে ৯০ দিনের মেয়াদে ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছে। এক্ষেত্রে কমিশন স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, কোনো ব্যক্তির প্রতিকৃতি, মূলনীতি, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, রাষ্ট্র ধর্ম, এক কক্ষ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে ইত্যাদি বিষয় কোন দেশের সংবিধানে আছে বা নেই তা জানার চেষ্টা করেছে। কমিশন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মতামত নিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে সারাদেশে একটি জরিপও পরিচালনা করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামত গ্রহণ করেছে। এর বাইরে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও নানাভাবে অংশীজনদের মতামত নিয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর ইস্যুতে বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত গ্রহণের জন্য জরিপ চালিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। এর বাইরে রাষ্ট্রের ১২০ জন সুশীলসমাজের নাগরিকের মতামত নিয়েছে কমিশন। অনলাইন জরিপে সাড়ে ৫৪ হাজার মতামত দিয়েছেন দেশের ও দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশি নাগরিকরা। সব পর্যালোচনা শেষে খসড়া প্রস্তাবনা চূড়ান্তকরণে কাজ করছে কমিশন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করা, একক নেতার আধিপত্য বিস্তারের ক্ষমতা খর্ব এবং ভবিষ্যৎ বিকল্প নেতা তৈরির জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় থাকছে সুপারিশ। সেখানে কোনো রাজনৈতিক দল জনভোটের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলে দলীয় প্রধান পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রী হলে, তাকে ছাড়তে হবে দলীয় প্রধানের পদ। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকালীন সময়ে তাকে দলের অন্য কোনো নেতার হাতে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব দিতে হবে। দলীয় প্রধান চাইলে প্রধানমন্ত্রী না হয়ে দলের অন্য কাউকে দিতে পারবেন।
সংস্কার কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম ও সুপারিশ নিয়ে শুক্রবার আমার দেশ পত্রিকার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রিয়াজ। সরকারপ্রধান হলে তিনি দলের প্রধান থাকতে পারবেন না- এমন কোনো সুপারিশ থাকছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সংস্কার কমিশনপ্রধান বলেন, অংশীজনসহ অনেকে এ বিষয়ে সুপারিশ করেছেন। আমরাও বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করেছি। একই সঙ্গে দলের প্রধান ও সরকারপ্রধান হলে ক্ষমতা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আমরা এককেন্দ্রিক ক্ষমতা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। কাজেই দলের প্রধান ও সরকারপ্রধানের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন হওয়া দরকার। কাজেই এ বিষয়টিকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছি।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এমন সুপারিশ আসছে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশে। তবে টানা দুইবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, নাকি ব্যক্তিজীবনে মোট দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন- এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এখনো কমিশন আসতে পারেনি বলে জানা গেছে। তবে টানা দুইবারের পরিবর্তে একাধিকক্রমে দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুপারিশ করার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে।