পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে গুলি ছুড়াতে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নির্বিচার প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের পর বিক্ষোভ দমনে গুলির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাবও এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বলপ্রয়োগে পাঁচটি ধাপ অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর নীতিমালা এবং পুলিশ প্রবিধান, ১৯৪৩ অনুযায়ী বলপ্রয়োগের এই ধাপগুলো প্রণয়ন করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পুলিশ সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দেয় গত ১৫ জানুয়ারি। সুপারিশে পুলিশ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হিসেবে নিরপেক্ষ প্রভাবমুক্ত পুলিশ কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। কমিশনের তিনজন সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রতিবেদনে কমিশন গঠনের বিষয়ে মতামত দেওয়া হলেও এর কাঠামো নিয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়নি। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে ১১ সদস্যের কমিশন এবং এর কাঠামোর বিষয়ে সংস্কার কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
গত বছরের ১৬ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতন (৫ আগস্ট) পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছেন। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, নাম-ঠিকানা জানা গেছে এমন আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৫১। এখন পর্যন্ত ৮২৬ জন নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক হিসাব অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ মৃত্যুই হয়েছে গুলিতে। আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত তিন শ্রেণির প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপেও বলপ্রয়োগের বিষয়টিকে সবার শুরুতে রাখা হয়েছে। ওই সারসংক্ষেপের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত পুলিশ প্রবিধান অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ঠিক রেখে ‘ইউজ অব ফোর্সের’ পাঁচটি ধাপ ঠিক করেছে পুলিশ। সংস্কার কমিশন এগুলো তাদের সুপারিশে রেখেছে। ধাপগুলো হলো শারীরিক সংস্পর্শ ছাড়া অবৈধ জনতাকে বাধা প্রদান, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে অবৈধ জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করা, স্বল্প বা ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার এবং দলগত অস্ত্রের ব্যবহার।
কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, সংঘবদ্ধ জনতা মিছিল, সমাবেশ বা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ প্রদর্শন করার প্রবণতা দেখালে পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে দৃশ্যমানভাবে নিয়োজিত হবেন। পুলিশ সংঘবদ্ধ জনতাকে অবৈধ ঘোষণা করলে ছত্রভঙ্গ না হয়ে অধিক শক্তি সঞ্চয় করতে থাকলে পরবর্তী ব্যবস্থায় যেতে পারবে। যদি জনতা মারমুখী আচরণ করে, ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটায় এবং পুলিশ ও সাধারণ জনগণকে আঘাত করে আহত করে, তখন ধীরে ধীরে গ্যাস স্প্রে, সাউন্ড হ্যান্ড গ্রেনেড, জলকামান, গ্যাস বা স্মোক ক্যানিস্টার ও লঞ্চার, হ্যান্ড স্টান ক্যানিস্টার, সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল লঞ্চার, পেপার স্প্রে, শটগান, ইলেকট্রিক পিস্তল প্রভৃতি ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া শুধু পুলিশ সদস্যদের বা ব্যক্তির আত্মরক্ষা বা সম্পত্তি রক্ষার অধিকার প্রয়োগের জন্য জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা যাবে। তবে সেই অধিকারও সীমাবদ্ধ থাকবে।