আমদানির কথা শুনে বড় আকারে দাম কমাল পেঁয়াজের কারবারিরা

0
IMG_20251208_124233_770

উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়ার ১২ ঘন্টার ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বড় দরপতন হয়েছে। শনিবার রাতেও নতুন পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হলেওে রোববার তা বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। পুরাতন পেঁয়াজের দামও কেজিতে ৩০-৪০ টাকা কমে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানির খবরে দাম কমেছে। এ ধারা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

রাজধানীর অন্যতম পাইকারি মার্কেট কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফ হোসেন আমার দেশকে বলেন, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঊর্ধ্বমুখি বাজারে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বিক্রি হলেও শনিবার ভোর থেকে চাহিদা কমে ক্রেতাই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিপুল পরিমাণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার পাশাপাশি আমদানির খবরে শনিবার রাত থেকে দাম কমতে শুরু করে রোববার দুপুর নাগাদ আগের দিনের তুলনায় পুরাতন পেঁয়াজ কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কমে ১০০ থেকে ১১০ টাকা হলেও ক্রেতা নেই। আর নতুন পেঁয়াজের দাম অর্ধেকে নেমে এসে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন, ২০ বস্তা পেঁয়াজে ৪০ হাজার টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে এরপরও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। গত দুইদিনে দাম বেশি থাকলেও চাহিদা ছিল। কিন্তু আমদানির খবরে দাম কমলেও এখন চাহিদা নেই, ক্রেতাও নেই।

খুঁচরা বাজারেও চাহিদা হ্রাস পেয়ে দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খুঁচরা বাজারে দাম কমলেও পাইকারি বাজারে যেহারে কমেছে তার প্রভাব কম। এখনো খুচরা বাজারে ১২০ থেকে ১৩০টাকা ধরে পুরাতন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। নতুন পেঁয়াজও ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাড়া-মহল্লার দোকানে এখনো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মাহফুজ বলেন, আমদানির খবরে দাম কমলেও ক্রেতা কম। ফলে হাতের পেঁয়াজ নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকেই কমবেশি লোকসানের মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমতে পারে। নতুন পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি পেঁয়াজ বাজারে ঢুকলে দাম আরো কমে যাবে।

একই বাজারের ব্যবসায়ী মতিয়ার হোসেন বলেন, মেহেরপুর জেলা থেকে হাইব্রিড ও দেশি জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমেছে। এছাড়া আমদানির খবরের প্রভাব পড়েছে পুরোনো পেঁয়াজের দামে। আর পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, এখন দিন দিন কমবে।

এর আগে রাজধানীর বাজারে সরবরাহ কমে গত শুক্রবার পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এতে টনক নড়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এরপর তড়িঘড়ি করে শনিবার রাতে পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে আমদানির ঘোষণা দেয়।

রোববার বিকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং বিভাগের পরিচালক মোঃ আব্দুর রহিম আমার দেশ, রোববার ৫০ জনকে অনলাইনে দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন করে পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ পাবেন।

শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ জাকির হোসেনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে রোববার থেকে সীমিত আকারে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। প্রতিটি আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজের অনুমোদন দেওয়া হবে।

এতে আরো বলা হয়, চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে অদ্যাবধি যেসব আমদানি-রপ্তানিকারক অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই শুধু আবেদন পুনরায় দাখিল করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। পেঁয়াজের বাজার সহনীয় রাখতে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

তবে রোববার বিকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, আমদানির খবরে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ টাকা কমে যাওয়া প্রমাণ করে যে, সিন্ডিকেট করে বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছিল। এমন কী আমদানির অনুমতি না দেওয়া হলে পেঁয়াজের কেজি ২০০টাকা পার করানোর হুমকি দিয়েছিল ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ফলে সরকারের একটি সংস্থার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, এ মুহূর্তে আমদানি করেও কোনো সুবিধা করতে পারবে না ওই চক্রটি। কেননা, এখনো এক লাখ ২০ হাজার টনের মতো পুরোনো পেঁয়াজ মার্কেট প্রসেস ও কৃষকের হাতে রয়েছে। এছাড়া নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই আরো আড়াই লাখ টন নতুন পেঁয়াজ আসবে।

এদিকে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা তৈরি করেছে ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির মতে, চার কারণে প্রতি বছর পেঁয়াজের দাম বাড়ে। প্রথমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য; দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব; তৃতীয়ত, মৌসুমের শেষ পর্যায়; চতুর্থত, বৃষ্টিতে পেঁয়াজের ক্ষতি।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশে ২৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ৪৪ লাখ টন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়ে যায় বলে ধরে নেয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *